মোঃ তৌহিদুল ইসলাম কবির, রামগঞ্জঃ দীর্ঘ প্রায় আট বছর পর আগামীকাল মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন।
নেতৃত্বে আসছেন কারা তা নিয়ে পুরো জেলাব্যাপী নানা আলোচনা- সমালোচনা থাকলেও রামগঞ্জ উপজেলায় চলছে, নানা জল্পনা-কল্পণা, ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।
কারন জেলা আওয়ামিলীগের এ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে একই পদে লড়ছেন রামগঞ্জ উপজেলার দুই কৃতি সন্তান ও সিনিয়র নেতা বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামিলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ শাহজাহান এবং জেলা আওয়ামিলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ সফিকুল ইসলাম।
তারা দুইজনই সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
এর আগে তারা দুইজনই বিভিন্ন সময়ে রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ফলে বিষয়টি এখন টক অব দ্যা রামগঞ্জে পরিনত হয়েছে।
এদিকে এই দুই নেতাকে নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনাটাই হচ্ছে বেশি। কারন রামগঞ্জ উপজেলা থেকে একই পদে দুইজনই প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী রয়েছেন দ্বিধা-দ্বন্ধে। কার পক্ষ নিবেন তারা।
আবার সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা মনে করছেন, রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা থাকবে কিন্তু প্রতিহিংসা থাকা ঠিক নয়।
এদিকে এই দুই নেতাকেই জেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই, দাবী জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে রামগঞ্জের গোটা শহর।
রামগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র এবং তৃনমূলের নেতাকর্মীরা একেকজন একেকজনের পক্ষে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও দিচ্ছেন নানা পোস্ট।
রামগঞ্জ উপজেলার তৃণমূলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, শাহজাহান ভাই অথবা সফিক ভাই, যিনিই সভাপতি হোন, আমাদের আপত্তি নেই। যদিও আমাদের পছন্দ রয়েছে। তবে জেলা আওয়ামিলীগের এ শীর্ষ পদে আমরা এই দুই ত্যাগী নেতার একজনকে দেখতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের একটাই দাবী।
তারা আরো জানায়, রামগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামিলীগের দুর্দিনে দলকে শক্ত হাতে টিকিয়ে রাখতে এ দুই নেতার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।
তারা দুইজনই বিভিন্ন সময়ে রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন সফলতার সাথে।
এদিকে পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্যকারীদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটিতে পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। কমিটিতে নারী নেতৃত্বকেও প্রাধান্য দেয়ার দাবি উঠেছে বর্তমান সময়ে। তাহলেই জেলার ৪টি আসনে নৌকার বিজয় সম্ভব বলে মনে করছেন পুরো লক্ষ্মীপুর জেলার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৫ সালের ৩ মার্চ। ওই সময়ে গোলাম ফারুক পিঙ্কুকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নকে সাধারণ সম্পাদক করে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
প্রায় এক লাখ লোকের সমাগম ঘটানোর টার্গেট নিয়ে সম্মেলনকে সফল করতে ৭টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সড়কে সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে শতাধিক তোরণ। শীর্ষ দুই পদ (সভাপতি ও সম্পাদক) নিয়ে চলছে টানাটানি। প্রার্থী হয়েছেন অন্তত এক ডজন নেতা।
শীর্ষ দুই পদের সভাপতি পদে সর্বোচ্চ আলোচনায় রয়েছেন, বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামিলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোহাম্মদ শাহজাহান, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: সফিকুল ইসলাম, বর্তমান সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা পাটওয়ারী, জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন, সাবেক ছাত্রনেতা জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ এর নাম শোনা যাচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আহসানুল কবির রিপন বলেন, বিগত সময়ে যারা পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন তাদের বাদ দিয়ে দুর্দিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের নতুন কমিটিতে মূল্যায়ন করতে হবে।
রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুরাইয়া আক্তার শিউলি জানান, বিএনপি দীর্ঘ দিন ঘাপটি মেরে বসে থেকে আবারও জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি শুরু করতে চায়। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে মহিলা আওয়ামী লীগ পর্যন্ত আমরা সুসংগঠিত রয়েছি বিএনপিকে প্রতিহত করার জন্য।
রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্ধিতা ও প্রতিযোগিতা থাকবে কিন্তু প্রতিহিংসা থাকা ঠিক নয়। আমরা কেউ হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করব না।
রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক আকম রুহুল আমিন বলেন, ওনারা দুইজনই আমাদের দলের লোক, ভালো লোক। উপজেলা আওয়ামিলীগের প্রস্তুতি সভায় আমরা দুইজনকেই দাওয়াত দিয়েছি। আলহাজ্ব মোঃ শাহজাহান আমাদের প্রস্তুতি সভায় যোগ দিয়েছেন এবং আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। কিন্তু সফিকুল ইসলাম প্রস্তুতি সভায় আসেননি এবং সহযোগিতাও চাননি।
জেলা আওয়ামিলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি প্রার্থী মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্র জীবন থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শ বুকে ধারণ করে রাজনীতি করেছি।
কখনো রাজনীতি করতে গিয়ে নিজের সুবিধা চিন্তা করিনি। শুধু কষ্ট হচ্ছে জেলার অনেকই এমপি- মন্ত্রী হচ্ছে, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে তাদের অবদান কি ছিল? হাইব্রিড নেতাকর্মীরা জনপ্রতিনিধি হলেও কখনো সংগঠনের আদর্শ হতে পারে না।
দলের আনুগতদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের তিন তিনবার সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি। দল যদি আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দেন, আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো লক্ষীপুর জেলার সবগুলো উপজেলায় আওয়ামীলীগ উজ্জীবিত হবে ইনশাআল্লাহ।
লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ শাহজাহান বলেন, দল আমার ত্যাগ-শ্রমের মূল্যায়ন করবেন। দুঃসময় আমি হামলা-মামলা, নির্যাতনের মধ্যেও আওয়ামীলীগের হাল ধরেছি।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর দলের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা এ জনপদকে পরিকল্পিতভাবে সমৃদ্ধ করতে কাজ করেছি। তার নির্দেশেই এখানকার জনগণের ভাগ্যন্নোয়নে কাজ করছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন এ যাবৎকালের সেরা ও সুন্দর একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দিপনা বিরাজ করছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, সম্মেলনে উদ্বোধক হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি, প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। সম্মেলনকে সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।